সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১২ জ্বিলক্বদ ১৪৪৫

ঈদের মাঠে ভোটের হাওয়া দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের

প্রকাশনার সময়: ২৩ এপ্রিল ২০২২, ০৪:৫৩ পূর্বাহ্ন

এবার ঈদের মাঠে ভোটের হাওয়া দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের। করোনা মহামারির সময়ে চারটি ঈদে ভাটা পড়। তখন ভয় ও মৃত্যু লড়াইয়ে কাটে প্রতিটি ক্ষণ। অম্লান হয় ঈদ-রাজনীতি। এবার সুসময়। তাই আগামী ঈদকে সামনে রেখে অতীতের শূন্যতা পূর্ণতায় রূপ দিতে মহাটার্গেট রাজনীতিবিদদের। 

প্রধান দুই রাজনৈতিক শিবিরসহ সব দলেই প্রকাশ্য ও গোপনে চলছে প্রস্তুতি। আগামী দ্বাদশ নির্বাচনের আগে কেন্দ্রকে আকৃষ্ট করতে নিজেদের অবস্থান অনেকেই জানান দিচ্ছেন। আগ থেকেই নিজ জেলায় ছুটে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ভোটারদের কাছে নিজেকে তুলে ধরতে ঈদকে বেছে নিয়েছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। 

এই তালিকায় বর্তমান সংসদ সদস্যরা তো রয়েছেনই, পাশাপাশি এলাকাবাসীর কাছে নিজেকে মেলে ধরতে ছুটছেন মনোনয়নপ্রত্যাশী তরুণ নেতারাও। সব নেতা নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় গণসংযোগ, উঠান বৈঠক, চা-চক্র, দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণের মাধ্যমে ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। দলীয় নেতাকর্মীদের জন্য উপহারের তালিকাও তৈরি করে ফেলছেন অনেকে। সরকার পক্ষ নিজেদের অবস্থান শক্তভাবে ধরে রাখতে আগে থেকেই এবার ঈদের মাঠে রয়েছে। 

অপরদিকে সরকারবিরোধীরাও বিশেষ সুযোগ হিসেবে এবারের ঈদকে টার্গেট করেছেন। মনোনোয়ন চূড়ান্ত করতে কেন্দ্রকে আকৃষ্ট করতে দলীয় নেতাকর্মীদের উপহার দিয়ে নজরে আসবেন। অন্যদিকে সবাই নিজ নিজ শক্তিও জানান দেবেন বলে জানা গেছে। 

প্রতি বছর ঈদে আওয়ামী লীগসহ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, বিদেশি কূটনীতিক, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করার প্রথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। ভিডিও বার্তায় তিনটি ঈদ পার হলেও এবার পুরনো রূপে ফিরে যাওয়া হচ্ছে। নেতারাও নিজ জেলায় ছুটে যাচ্ছেন। জানা গেছে, আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক দলের বড় নেতারা এবারো ঢাকা ছাড়ছেন। বাড়ি যাওয়ার আগেই এলাকায় গরিব মানুষের মধ্যে ঈদের উপহার পাঠিয়ে দিচ্ছেন। 

গত চারটি ঈদ করোনার কারণে যে ভাটা পড়েছে সেটি এবার পূরণের চেষ্টা করা হচ্ছে স্বচ্ছভাবে। আগামী দ্বাদশ নির্বাচনের আগে এ ঈদ অনেক বেশি প্রভাব ফেলবে বলেও মনে করা হচ্ছে। ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়, সবার মাঝে মেলবন্ধন; এবার তা পূর্ণতা পাবে। যারা নিজেদের তুলে ধরতে পারবে এ ঈদের মাধ্যমে তারাই কেন্দ্রের কাছে বিশেষ তালিকায় থাকবেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক দলের নীতি নির্ধারকরা। 

করোনার দুঃসময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাকর্মী ও এমপিরা আক্রান্ত হয়েছেন, মারাও গেছেন কেউ কেউ। এখনো বেশ কজন মৃত্যুশয্যায়। সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও আক্রান্ত হয়েছেন। কোভিডমুক্ত হলেও এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় এখনো জর্জরিত তিনি। দীর্ঘ করোনায় বিপর্যস্ত  হয়ে পড়ে রাজনৈতিক দলগুলো। ঘর থেকে অনলাইন ব্রিফিংয়ে পরিচালিত হয় করোনাকালীন কর্মসূচি। করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় তখন এমপি-মন্ত্রীদের বড় একটি অংশ ঢাকায় অবস্থান করেছিলেন। বাসার বাইরে বের হননি। তাই এবার সবাই ঈদে বাড়ি যাচ্ছেন। দীর্ঘ সময় তৃণমূলের কর্মীরা তাদের রাজনৈতিক  নেতাদের কাছে পাননি। ওই সময়ে ঈদ উৎসবে গণভবনে আনুষ্ঠানিক কর্মসূচিও ছিল না। প্রধানমন্ত্রী ফোনে ও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। সরকারবিরোধী নেতারাও একই ফ্লাটফর্মে  ছিলেন।

সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, ‘দেশের মানুষের কাছে যাওয়া, তাদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে খোঁজ খবর রাখা, সুখ-দুঃখে তাদের পাশে থাকা, সাহায্য-সহযোগিতা করাই রাজনীতিবিদদের কাজ। বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে গত দুই বছর আমরা মানুষের কাছাকাছি যেতে পারিনি। এবার করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। ফলে আসন্ন ঈদুল ফিতর আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ 

তিনি বলেন, ‘ঈদকে সামনে রেখে আমরা কিন্তু এলাকায় যাচ্ছি। দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের খোঁজ খবর রাখতে শুরু করেছি। আশা করি ঈদের আগে আমাদের এই সব কার্যক্রম আরও বৃদ্ধি পাবে। যেন আমরা সমানভাবে সবার পাশে দাঁড়াতে পারি।’      

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘করোনার কারণে গত দুই বছর ঘরে বসে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় জীবন-যাপন করেছি। বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। এই ঈদের আমাদের দলীয় নেতাকর্মী, সাধারণ মানুষ, শ্রমজীবী মানুষ ও অসহায়দের সরাসরি সময় দেবো। দীর্ঘদিন পর মিলিত হবো। বিষয়টি অবশ্যই আমাদের কাছে অনেক আনন্দের।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘দেশে রাজনীতির পরিবেশ নেই, গণতন্ত্র নেই, নিজ দলের কর্মী ও সাধারণ মানুষের কাছে যাওয়ার দায়বদ্ধতাও নেই। এই প্রবণতা থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে। ঈদ সামনে রেখে সবার উচিত নিজ নিজ এলাকার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের পাশে থাকা; তাদের সুবিধা-অসুবিধা দেখা।’

 তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমান রাজনীতি এমপি-মন্ত্রী হওয়ার রাজনীতি। ঘরে বসে ক্ষমতা পাওয়ার রাজনীতি করে লাভ নেই। নেতারা ঢাকায় বসে এমপি-মন্ত্রী হবেন, এ প্রবণতাই বেশি। কারণ, দেশে রাজনীতির পরিবেশ নেই, গণতন্ত্র নেই, নিজ দলের কর্মী ও সাধারণ মানুষের কাছে যাওয়ার দায়বদ্ধতাও নেই। এই প্রবণতা থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে। ঈদ সামনে রেখে আমি সবসময় এলাকায় অবস্থান করি।’ 

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, ‘করোনা প্রায় কেটে গেছে। পরিস্থিতি এখন অনেক স্বাভাবিক হয়েছে। নেতারা পরিস্থিতির কারণে অনেকে কয়েকটি ঈদে  মাঠে যেতে পারেননি। এবার সেটি আর বাধা থাকবে না। কর্মীদের খোঁজ খবর নেয়ার বিষয়টি এবার বেশি হবে। 
জামায়াতে ইসলামী সব সময় ঈদ সময়ে অসহায়দের পাশে থাকে, এবারো থাকছে। আমরা আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের খোঁজ খবর নিচ্ছি এবং তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করছি।’ 

মন্তব্য করুন